রাজধানী সানায় ইসরায়েলের হামলায় ইয়েমেনের হুথি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ গালেব আল-রাহাভিসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রী নিহত হয়েছেন। শনিবার হুথিদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান মাহদি আল-মাশাত এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এটিই প্রথম কোনো হামলা যেখানে গোষ্ঠীটির শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত হলেন।
মাহদি আরও জানান, বৃহস্পতিবারের এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ইসরায়েল শুক্রবার জানিয়েছিল, তাদের বিমান হামলাটি ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর চিফ অভ স্টাফ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছিল, সানার একটি সমাবেশে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালালে রাহাভি ও অন্যান্য শীর্ষ হুথি কর্মকর্তারা ‘নির্মূল’ হন।
তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতাহতদের মধ্যে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-হাদাথ বলেছে, হামলায় হুথিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিচারমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণ ও শ্রমমন্ত্রী নিহত হয়েছেন।
আহমেদ গালেব আল-রাহাভিকে এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের প্রকৃত নেতা ছিলেন তার উপ-প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ মিফতাহ; তাকে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
রাহাভিকে মূলত আলঙ্কারিক প্রধান হিসেবে দেখা হতো। তিনি হুথি নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ের অংশ ছিলেন না।
রকহাভি ছিলেন ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ-র মিত্র। সালেহকে হুথিরা ২০১৪ সালের শেষের দিকে সানা থেকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধ।
তবে রাহাভি পরে হুথিদের সঙ্গে যোগ দেন। তখন থেকেই ইয়েমেন সানার হুথি প্রশাসন ও এডেনের সৌদি-সমর্থিত সরকারে বিভক্ত।
গত এক দশক ধরে ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হুথিরা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান-সমর্থিত হুথিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে।
তারা প্রায়শই ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছে। সেসবের বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছে। জবাবে ইসরায়েলও হোদেইদা বন্দরসহ ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও তাদের লেবানিজ মিত্র হেজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা ও কমান্ডারদের লক্ষ্য করে একাধিক গুপ্তহত্যা চালিয়েছে। এতে উভয় গোষ্ঠীকেই উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শনিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, এই হামলা হুথিদের জন্য একটি ‘চরম আঘাত’। তিনি আরও বলেন, ‘এ তো কেবল শুরু।’
প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হুথি-পরিচালিত সংবাদ সংস্থা ‘সাবা’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আল-আতিফির বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তার গোষ্ঠী ইসরায়েলের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
তবে বিবৃতিতে বৃহস্পতিবারের বিমান হামলার কোনো উল্লেখ ছিল না। বিবৃতিটি হামলার আগে না পরে দেওয়া হয়েছিল, তা-ও স্পষ্ট নয়।
আতিফি হুথিদের ‘মিসাইল ব্রিগেড গ্রুপ’ পরিচালনা করেন। তাকে হুথিদের প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ মনে করা হয়।